'হয়তো এইচএসসি আর পড়া হবে না, এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে (MIT) ভর্তির সুযোগ পেয়ে নাফিসও অবাক'।
'হয়তো এইচএসসি আর পড়া হবে না, এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে (MIT) ভর্তির সুযোগ পেয়ে নাফিসও অবাক'। |
সবারই একটাই প্রশ্ন চাঁদপুর থেকে কিভাবে বিশ্বসেরা এমআইটিতে পৌঁছেছে নাফিস? চলুন জেনে নেয়া যাক - সাফল্যের পিছনের গল্পটা!
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট
অব টেকনোলজি (এমআইটি)- তে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে পড়ার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত
হয়েছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী
শিক্ষার্থী মো. নাফিস উল হক সিফাত।
যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের নাফিস
ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন নাফিস। তাই খুব ছোট বয়স থেকেই গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাফিস ছিলেন নিয়মিত মুখ। আছে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। এর আগে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে পাস করেন তিনি। তবে এমআইটির মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন, নাফিস সেটা কখনো ভাবেননি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। তবে সে এইচএসসি পাসের আগেই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) স্নাতকে ভর্তির অফার পেয়েছে। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! ভাবছেন, তথ্যটা কি সত্যি আসলেই? গত ১৫ মার্চ এমআইটি থেকে পাঠানো এক ই-মেইলে নাফিসের ভর্তির সুযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
আমেরিকার এমআইটিতে যেভাবে চান্স পেলেন নাফিস
এমআইটিতে চান্স পাওয়া নাফিস বলেন, কোন কিছুই আসলে অসম্ভব নয়। চেষ্টা থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। ওরা আসলে দেখতে চায় পড়ালেখায় কতটা ভালো, মানুষ হিসেবে কেমন, কোন বিষয়ে আগ্রহ আছে কি না তার, সে কিভাবে সমস্যার সমাধান করছে। আমি আসলে অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স এ ব্রোঞ্জ পদক লাভ করায় তারা আমাকে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত করেছেন। আমি সবার দোয়া চাই। বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
তিনি বলেন, আমি কখনো ভাবিনি বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়ার সুযোগ পাব। এ জন্য আমি বলবো, আমি অনেক লাকি। কারণ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর একজন বা দুজন এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পায়। এতে আমি অবাক হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি। এ জন্য আমার বাবা মা, আমার শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে কৃতজ্ঞ। নাফিস বলেন, আমার ছোট বেলা থেকে স্বপ্নও ছিল কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করার। সে লক্ষ্য নিয়ে আমি সব সময় বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশ গ্রহণ করতাম। তিনি জানান, আমি কখনোই নির্দিষ্ট করে এমআইটির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ অনেক ট্যালেন্ট ছাড়া এমআইটিতে কেউ সুযোগ পায়না। এমনটা কনফিডেন্টও ছিলাম না এমআইটিতে সুযোগ পাব। তারপরও আমি ট্রাই করেছি। দেখি কি হয়। শেষ পর্যন্ত দেখলাম আমি সত্যি সুযোগ পেয়েছি। এতে মনে করি আমি অনেক লাকি।
নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে নাফিস বলেন, ‘আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করার। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি সব সময় বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতাম। এ ছাড়া আমি সবসময় বিখ্যাত ব্যক্তি ও গুণী স্যারদের অনুসরণ করতাম। কিন্তু কখনোই নির্দিষ্ট করে এমআইটির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ, অনেক মেধাবী না হলে এমআইটিতে সুযোগ পাওয়া কঠিন। আমি এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। তারপরও আমি চেষ্টা করেছি, দেখি কি হয়। শেষ পর্যন্ত দেখলাম, আমি সত্যি সুযোগ পেয়েছি। এতে মনে করি, আমি অনেকটা ভাগ্যবান। ’
নবীনদের উদ্দেশ্যে নাফিস বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ থাকবে, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে এবং এর পাশাপাশি এক্সটা কারিকুলাম একিটিভিটিসগুলোতে নিজেদেরকে যুক্ত রাখতে হবে। ’
এমআইটিতে যারা আবেদন করেন তাদের সবাইকে একটা নিজস্ব পোর্টাল দেওয়া হয়। এই পোর্টালের মধ্যে রেজাল্টসহ অন্যান্য সব আপডেট দেওয়া হয়। আমি চিঠিটি পেয়েছি ১৫ মার্চ সাড়ে ৪টার দিকে। এমআইটিতে প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে দুই- একজন করে চান্স পায়। আমিও তাদের একজন। তবে আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সকলের দোয়া ও ভালবাসা চাই। এক সাক্ষাতকারে এভাবে কথাগুলো বললেন এমআইটিতে সুযোগ পাওয়া চাঁদপুর সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাফিস উল হক ওরফে সিফাত।
সংবর্ধনা পেলেন নাফিস
নাফিসের এই সফলতায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে তাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এ সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাস বলেন, আমার কলেজ নাফিস এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেটা তার চেষ্টা ছিল। কারণ সে সব সময় বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা বা গবেষনার আগ্রহ ছিল। সেটারই প্রতিফলনে এটা হয়েছে। শুধু আমার কলেজে নয়, খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ রকম অনেক নাফিসকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমি আশা করবো, অনুসন্ধান করলে আমরা অনেক নাফিসকে বের করে আনতে পারবো।
এদিকে শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে নাফিসকে ফুল দিয়ে বরণ নেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নাফিস শুধু চাঁদপুরের নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। কারণ নাফিস এদেশের মুখ উজ্জল করেছে। আমি তার সাফল্যতায় সব সময় পাশে থাকবো। অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের নাফিস
চাঁদপুর থেকে এমআইটি পৌঁছানোর আগে গত বছরের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) - এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে নাফিস। যা মূলত তাকে এই সাফল্য অর্জনে সহয়তা করেছে।এছাড়াও নাফিসের রয়েছে আরও কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্জন। যথাক্রমে:
- International Olympiad in Informatics 2022 Indonesia - Bronze Medal
- Bangladesh Olympiad in Informatics 2022 - Gold Medal
- International Olympiad in Informatics 2021 Singapore - Bronze Medal
- Asia Pacific Olympiad in Informatics 2022 - Bronze Medal
- Bangladesh Mathematical Olympiad - 2021: 2nd Runners Up and National Camper, 2022: 1st Runners Up and National
- National High School Programming Contest - 2021: 2nd Runners Up
জাস্ট একবার চিন্তা করেন এইচএসসি পড়ুয়া একজনের অর্জনের লিস্ট এটা। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন নাফিস সাধারণ কেউ না! এসব ছাড়াও নাফিস কোডিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম - কোডফোর্সেস এর 'ক্যান্ডিডেট মাস্টার'!!! পুরো বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকজনই রয়েছে এই ট্যাগধারী! আজ অর্জনের গল্প সবাই শেয়ার করছে! কিন্তু সেই ছোট্ট নাফিস বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেই স্বপ্ন ছুয়েছে! প্রবলেম সলভিংয়ের প্রচুর দক্ষ এই মেধাবী শিক্ষার্থী এবার পড়াশোনা করবে এমআইটির সিএসসিতে! অভিনন্দন নাফিস উল হক সিফাত! নাফিসের জন্য দোয়া আর শুভকামনা রইলো! আরও হাজার নাফিস বের হয়ে আসুক দেশের সকল প্রান্ত থেকে আর বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করুক, এটাই চাওয়া আমাদের সবার।
এইচএসসি পাসের আগেই এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নাফিসও অবাক
প্রসঙ্গত এমআইটি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রকৌশল ও মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সব সময়ই আন্তর্জাতিক র্যােঙ্কিংয়ে প্রথম হয়। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন বিশ্বের নামকরা সব পণ্ডিত ও গবেষক। ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণায় বিশ্বব্যাপী এর একটা সুনাম রয়েছে। জানা যায়, বাংলাদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে নাফিস সবচেয়ে কম বয়সে এইচএসসিতে পড়ালেখা অবস্থায় এমআইটিতে আন্ডার গ্রাজুয়েটে (স্নাতক) পড়ার সুযোগ পান। তিনি দেখিয়ে দিলেন মেধার জোড়। আসলেই মেধার কোন বিকল্প নেই। মেধা আর যোগ্যতার কাছে সব কিছুই যেন নস্যি। এইচএসসি পাশ না করেও তিনি চান্স পেয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত এমআইটিতে।এমআইটির নাম শুনরার পর থেকেবই তার ইচ্ছে ছিল সেখানে পড়ার। এমআইটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছের যেন বাস্তবায়ন হতে চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই
Thanks for your valuable comments...