Header Ads

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের - "অতি কার্যকর ও তাৎপর্যপূর্ণ ১৪টি উপায়"

 


মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের - "১৪টি কার্যকর ও তাৎপর্যপূর্ণ উপায়"

জীবনে চলার পথে বিভিন্ন কারণেই বিষণ্ণতা চলে আসতে পারে। হুটহাট মনমালিণ্যতা, আবেগে আপ্লুত হওয়া, চাহিদার অপূর্ণতা, বারবার ব্যর্থতা, অতিরিক্ত প্রেশার নেয়া ইত্যাদি নানাবিধ কারণে প্রতিনিয়ত আমরা ডিপ্রশনে ভুগছি। কিন্তু নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত ডিপ্রশনে থাকা দেহ, মন-মানসিকতা, জীবনযাত্রা সব দিক দিয়েই অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই সেটি কন্ট্রোলে রাখা আমাদের একান্ত জরুরী। নিম্নে মানসিক চাপ কন্ট্রোল করার ১৪টি কার্যকরী এবং তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশিকা প্রদান করা হল:
 
১) মানুষের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হবেন না । কে কী করছে সে বিষয়ে মাথা ঘামানো নিজের মানসিক চাপ বৃদ্ধির একটি কারণ। আরেকটি সমস্যা হবে, অন্যের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালে নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার মনোভাব সৃষ্টি হবে। টাকা-পয়সা, সামাজিক অবস্থান, পদমর্যাদা, গাড়ি, বাড়ি, অলংকার, পোশাক, সৌন্দর্য ইত্যাদি দিক থেকে তখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন। তাই সৃষ্টিকর্তা আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে খুশি থাকুন আর শুকরিয়া আদায় করুন। তাহলে হৃদয়ে পরম প্রশান্তি অনুভব করবেন।
 
২) আপনার যতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্য ততটুকু পরম আন্তরিকতার সাথে পালন করুন। আপনার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলতে যাবেন না। অন্যথায় আপনাকে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকতে হবে।
 
৩) মানুষের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। তাই আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী, কলিগ, ক্লাসমেট ইত্যাদির সাথে সীমিত সম্পর্ক রাখুন। সম্পর্ক যত ব্যাপক হবে ততই আপনি নানা বাধ্যবাধকতার জালে আটকে যাবেন।
 
৪) অতিলোভ করবেন না। অতিলোভী ব্যক্তি অর্থ-কড়ি, ধন-দৌলত, পদমর্যাদা ইত্যাদি বৃদ্ধির চিন্তায় বিভোর থাকে। যদি সামান্য টাকা-পয়সা হাতছাড়া হয় বা চাকুরীর প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার হাহুতাশ দেখে কে? সুতরাং অল্পে তুষ্টি থাকা মানসিক শান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
৫) সাধ্যের বাইরে নিজের অর্থ-সম্পদ, আরাম-আয়েশ উজাড় করে দিবেন না। যারা কৃত্রিমভাবে নিজের সব কিছুকে উৎসর্গ করে দেয় তারা তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে মানুষের ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু যদি তা না পায় তখন তার মানসিক অস্থিরতা ও টেনশন বেড়ে যায়।
 
৬) আজকের দিনটিকে ভালভাবে উপভোগ করুন। আগামীকাল কী হবে সেটা নিয়ে বসে থাকবেন না। এতে শুধুই হতাশাগ্রস্ত হবেন। তাই আগামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করবেন না।
 
৭) প্রতিদিন একান্ত নির্জনে একাকী কিছু সময় কাটান। এ সময় যাবতীয় ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে ইন্টারনেট তথা হোয়াটসএ্যাপ, ফেসবুক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। এ সময়টুকু নিজের আত্মসমালোচনা করুন আর সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করুন। তাহলে দেখবেন, সৃষ্টিকর্তার কৃপায় মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন।
 
৮) জ্ঞানীদের জীবনী পড়ুন, তাদের উপদেশ ও মূল্যবান বাণীগুলো আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করুন। তাহলে দেখবেন তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ আপনার জীবনের চলার পথকে সহজ করে দিচ্ছে।
 
৯) জীবনে যত বিপদ ও সমস্যাই আসুক না কেন - যেমনঃ আর্থিক ক্ষতি, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি এগুলো নিয়ে খুব বেশী ভেঙে পরবেন না। বরং সহজভাবে মেনে নিন। আপনার ভাগ্যে যা ছিল তা ঘটবেই, এ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত বা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের বিপদাপদেই হয়ত কল্যাণ নিহিত করে রেখেছেন; যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। 
 
১০) সব কিছুই অতি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন না। মানুষের প্রতিটি কথা বা কাজ অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা ঠিক নয়। কে কি বললো-না বললো, আপনার কর্ম দ্বারা কেউ সন্তুষ্ট হলো কিনা - তা নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত নয়। বরং সবসময় প্রফুল্ল থাকুন এবং মনে আনন্দ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাতে হাসতে শিখুন। আপনার কথা ও আচরণে যেন ফুলের মতো সুঘ্রাণ বের হয় সেই দিকটায় লক্ষ্য রাখুন। তাহলে দেখবেন আপনার মন ফ্রেশ থাকবে আর মানসিক চাপও কমে যাবে।
 
১১) নিজেকে সুস্থ রাখতে যেমন মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজন। ঠিক তেমনিভাবে দেহকে সুস্থ রাখতে আপনি তার প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়তা করুন। প্রয়োজনীয় খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা সময়মতো করার চেষ্টা করুন। কারণ, দেহ আপনার এবং আপনি ভাল বুঝতে পারবেন আপনার কোন সময় কোন জৈবিক চাহিদাটি প্রয়োজন। তাই ঠিকমতো নিজের যত্ন নিন এবং সময়ের কাজ সময়ে করুন। তাহলে দেখবেন আপনার মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতাও অনুভব করছেন।
 
১২) দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের লিস্টটা এখনি তৈরি করে ফেলুন। আগেরটা কাজটা আগে করুন আর পরেরটা সময়মতো করার চেষ্টা করুন। তবে তা করতে গিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলে দিবেন না। মনে রাখবেন, অগোছালো কার্যক্রম মানসিক অস্থিরতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ তৈরি সহায়তা করে।
 
১৩) "প্রতিটি কাজই ১০০ পার্সেন্ট নির্ভুলভাবে করতে হবে" - এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। কেননা, যারা সবকাজ নির্ভুলভাবে করার চিন্তায় থাকে; তাদেরকেই চর্তুদিকে থেকে দুঃশ্চিন্তা, টেনশন, অস্থিরতা ঘিরে ধরে। ফলে তাদের মানসিক চাপ চরম আকার ধারণ করে।
 
১৪) সর্বোপরি নিজেকে গুটিয়ে না রেখে সামাজিক প্রয়োজন না হলেও ব্যাক্তি প্রয়োজনে কিছু সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন। চাইলে কালচারাল প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন স্কিল ডেভলপমেন্ট ইভেন্টসগুলোতে পার্টিসিপেট করতে পারেন। নিয়মিত মিটিং-আড্ডায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। এতে দেখবেন প্রতিনিয়তই আপনি নতুন নতুন কিছু শিখতে এবং আয়ত্তে আনতে পারছেন। নিজের আইডিয়া-ক্রিয়েটিভিটি গুলো শুধুমাত্র নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটান। হয়তো দেখবেন কোনো একদিন আপনার এই হিডেন ট্যালেন্টগুলোই আপনাকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে সহায়তা করছে!!
 
সৃষ্টিকর্তা সহায় হোক আপনার।
ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই

Thanks for your valuable comments...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.